সান্ধ্য কোর্স রাখতে ঢাবি শিক্ষকদের একাংশ ‘ফাইট’ দেবেন - দৈনিকশিক্ষা

সান্ধ্য কোর্স রাখতে ঢাবি শিক্ষকদের একাংশ ‘ফাইট’ দেবেন

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষকদের একটি অংশ সান্ধ্য কোর্স চালু রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের শিক্ষকেরা বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিষদের (একাডেমিক কাউন্সিল) সভায় ‘ফাইট’ করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। একাডেমিক কাউন্সিলের সভা সামনে রেখে তাঁরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আসিফ হাওলাদার।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা ও সান্ধ্য কোর্স নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আজ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা পরিষদের (একাডেমিক কাউন্সিল) সভা ডেকেছেন উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে—সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাবে কি না এবং চলমান সান্ধ্য কোর্সের ধরনে পরিবর্তন আসবে কি না।

সান্ধ্য কোর্স পর্যালোচনা ও যৌক্তিকতা যাচাই কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৩৫টি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে সান্ধ্য কোর্স আছে। মাস্টার্স, ডিপ্লোমা, সার্টিফিকেট, ট্রেনিং কোর্সসহ অনিয়মিত এসব কোর্সের সংখ্যা ৬৯। এর মধ্যে ৫১টি মাস্টার্স, ৪টি ডিপ্লোমা, ৭টি সার্টিফিকেট আর ৭টি ট্রেনিং কোর্স। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত কোর্সের বাইরে ১০৫টি ব্যাচে এসব কোর্সে বছরে ৭ হাজার ৩০২ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হন। তাঁদের ক্লাস নেন ৭২৫ জন শিক্ষক।

সবচেয়ে বেশি সান্ধ্য কোর্স আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে। এই অনুষদের ৯টি বিভাগের প্রতিটিতেই সান্ধ্য কোর্স আছে। এসব কোর্সে প্রতিবছর ৪৫টি ব্যাচে ২ হাজার ৯৬৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হন। ক্লাস নেন ২৩০ জন শিক্ষক।

সান্ধ্য কোর্সে বাড়তি আয়ের সুযোগ আছে। এ জন্য শিক্ষকদের অনেকেই নিয়মিতর চেয়ে সান্ধ্য কোর্সে ক্লাস নিতে বেশি আগ্রহী—এমন অভিযোগ বেশ পুরোনো। তা ছাড়া সান্ধ্য কোর্স করতে নিয়মিত কোর্সের চেয়ে বেশি অর্থ লাগে। নামমাত্র ভর্তি পরীক্ষা, এমনকি কিছু ক্ষেত্রে পরীক্ষা ছাড়াই নিয়মবহির্ভূতভাবে এসব কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগ রয়েছে।

শিক্ষা পরিষদের আজকের সভা সামনে রেখে গতকাল শনিবার বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকদের একটি সভা ডাকেন ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মাদ আবদুল মঈন। ‘উদ্বিগ্ন সহকর্মীদের পক্ষে’ ব্যানারে অনুষদের শিক্ষকদের মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে এই শিক্ষক বলেছেন, ‘অনুষদের অধ্যাপক হাবীবুল্লাহ সভাকক্ষে ২৩ ফেব্রুয়ারি বেলা দুইটায় সান্ধ্য কোর্সসহ অনিয়মিত কোর্সগুলোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সভায় আপনাদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।’

আরও পড়ুন: সান্ধ্য কোর্স বিষয়ে ইউজিসি ব্যবস্থা নিতে পারে: প্রধানমন্ত্রী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সব সান্ধ্য কোর্স বন্ধের সুপারিশ

সান্ধ্য কোর্সের নামে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ব্যবসা বন্ধ করুন

সান্ধ্য কোর্স ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অকালমৃত্যু!

ভার্সিটির সান্ধ্য কোর্স হুট করে বন্ধ নয়, নতুন শিক্ষার্থীও নয়

জবিতে বন্ধ ঘোষণার পর ফের সান্ধ্য কোর্সে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ

সান্ধ্য কোর্স এখনই বন্ধ করা উচিত : অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর

অভিযোগ উঠেছে, শিক্ষা পরিষদের সভায় সান্ধ্য কোর্সের পক্ষে ‘ফাইট’ দিতে শিক্ষকদের ‘ম্যানেজ’ করার উদ্দেশ্যে এই সভা ডাকা হয়েছে। অনুষদের ডিন শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের নির্দেশনায় এই সভা ডাকা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক নীতিনির্ধারক ও শিক্ষকনেতা।

বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট ও সিন্ডিকেটের দুজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সান্ধ্য কোর্স বন্ধ হলে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলামের একক কর্তৃত্ব থাকবে না। এ ছাড়া অতিরিক্ত আয়ের কারণে অনেক শিক্ষক তাঁর সঙ্গে রয়েছেন। মূলত, সে কারণেই ওই ডিন ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষকেরা এটি নিয়ে সক্রিয়। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা একাডেমিক কাউন্সিলে ‘ফাইট’ দিতে চান। এ ক্ষেত্রে বিএনপিপন্থি শিক্ষকেরাও বাদ যাননি।

অধ্যাপক মুহাম্মাদ আবদুল মঈন সভা ডাকার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও সভার উদ্দেশ্য নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে জানালে তিনি বলেন, ‘সমালোচনা হলে তো কিছু করার নেই। আমাদের যা বলার, তা আমরা একাডেমিক কাউন্সিলের সভার পরে বলব।’

সভাটির বিষয়ে ‘আনুষ্ঠানিকভাবে’ জানেন না বলে জানিয়েছেন অনুষদের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিএনপি-সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দলের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ শাখার আহ্বায়ক মো. শহিদুল ইসলাম। তবে তাঁর বক্তব্য, ‘একটি যৌক্তিক জায়গা থেকেই ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স চালু হয়েছিল। এসব কোর্সের চাহিদাও আছে। তাই বন্ধ না করে এ ক্ষেত্রে সংস্কার করা যেতে পারে। নীতিমালার আওতায় পরিচালনা করা যেতে পারে।’

জানতে চাইলে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে ডাকা সভার বিষয়ে তিনি অবগত নন। তবে এটি নিয়ে প্রশ্ন তোলারও কিছু নেই। কে কী মনে করেন, তা নিয়ে আলোচনা হতেই পারে।’

সান্ধ্য কোর্সের বিষয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম বলেন, ‘পৃথিবীর সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ইএমবিএ আছে। স্কিল ডেভেলপমেন্টসহ বিভিন্ন কিছুর জন্য চাকরিজীবীরা আমাদের এখানে পড়তে আসেন। এই সুযোগ বন্ধ করা ঠিক হবে না বলে আমি মনে করি। যদি বন্ধ করতেই হয়, পাবলিক ও বেসরকারি—সব বিশ্ববিদ্যালয়কেই এ ধরনের কোর্স বন্ধ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে আমাদের কোনো সমস্যা থাকবে না।’

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033149719238281