অনলাইন ক্লাস করতে পারছে না মধুপুরের শিক্ষার্থীরা - দৈনিকশিক্ষা

অনলাইন ক্লাস করতে পারছে না মধুপুরের শিক্ষার্থীরা

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি |

মহামারি করোনার দরুন পড়ালেখায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীরা। অনলাইন ক্লাসের সুফল না পাওয়ায় দুর্যোগকালে পড়ালেখা প্রায় ভুলতেই বসেছে তারা। টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার দুই তৃতীয়াংশ পাহাড়ি এলাকা। এসব এলাকায় সড়ক যোগযোগ যেমন অনুন্নত, তেমনি মোবাইল নেটওয়ার্কও যাচ্ছেতাই।

মধুপুর উপজেলার বেড়িবাইদ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তুষার রেমা জানান, পাহাড়ি জনপদে বাড়ির বাইরে বা চকে নেমে যে নেট মিলে তা দিয়ে টেনেটুনে কথা বলা যায়। কিন্তু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অনলাইনে একটিভ হওয়া সম্ভব হয় না। দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনলাইন ক্লাস একমাত্র ভরসা। কিন্তু পাহাড়ি গ্রামের অধিকাংশ গারো ও বাঙালি ঘরের দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের স্মার্ট মোবাইল হ্যান্ডসেট কেনার সামর্থ্য নেই। আবার ধারকর্জের টাকায় যারা মোবাইল সেট কিনেছেন বাড়িতে নেট না মেলায় তারাও সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

পীরগাছা সেন্টপল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অরুণ মৃ জানান, স্কুলে সাত শতাধিক শিক্ষার্থীর দুই তৃতীয়াংশ গারো জনগোষ্ঠীর এবং তারা মেয়ে। তারা সাধারণত প্রতিষ্ঠান থেকে ছয়/সাত কিলো দূরের গ্রাম থেকে বনবাদাড় ও কাঁচা রাস্তা, জলকাদা মাড়িয়ে স্কুলে আসে। পোনামারি, বানুরিয়া, কেজাই, সাধুপাড়া, ভেদুরিয়া, লাঙ্গলভাঙ্গা, কাকড়াগুণি, বিজয়পুর, সাতারিয়া, হাগড়াকুড়ি, জয়নাগাছা, সুবকচনা, বাঘড়া, বাঘাডোবা, ফুলবাগচালা, সাইনামারি, ভুটিয়া, ধরাটি, মমিনপুর ও কাইলাকুড়ি গ্রামের শিক্ষার্থীরা এখানে পড়াশোনা করে। এসব গ্রামে মোবাইল নেটওয়ার্ক নাই বললেই চলে। স্কুলের শতকরা ৯০ ভাগ ছেলেমেয়ে কোনো দিনই অনলাইন ক্লাস করতে পারেনি। তাদের একমাত্র অবলম্বন হলো স্কুল থেকে দেওয়া অ্যাসাইনমেন্ট। কিন্তু শিক্ষকের অনলাইন ক্লাসে অংশ না নিতে পারলে শুধু অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। পাঠ্যপুস্তকের অনেক বিষয় শিক্ষকরা যেভাবে সহজে শিক্ষার্থীদের নিকট উপস্থাপন করেন, অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে তার এক-দশমাংশ পূরণ করা সম্ভব নয়।

সেন্টপল হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র নিউ চিশিম জানায়, বাবা নেই। মা কলা ও আনারস বাগানে দিনমজুরি করেন। খাবারই যেখানে জোটে না, সেখানে দামি মোবাইল সেট কিনে অনলাইনে ক্লাস করা সম্ভব নয়। তার সহপাঠী এডওয়ার্ড মৃ জানায়, তার বড়বোন বিউটি পার্লারে চাকরি করেন। বহুকষ্টে ৭ হাজার টাকায় একটি হ্যান্ডসেট কিনে দিয়েছেন। কিন্তু বাড়িতে নেটওয়ার্ক না থাকায় সেটি দিয়ে অনলাইন ক্লাস করতে পারছে না। জলছত্র কর্পোস খৃস্ট উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী সুবকচনা মৃ জানায়, ২০২০ সালের মার্চে স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এক দিনও অনলাইনে ক্লাস করতে পারেনি। পাহাড়ের অধিকাংশ পরিবার দরিদ্র। তাদের বাবা-মা যেখানে দুই বেলা অন্ন জোটানোর জন্য দিনমজুরি করেন, সেখানে অতটাকা দিয়ে মোবাইল হ্যান্ডসেট কেনা সম্ভব নয়। একই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী অমৃত মৃ জানায়, সরকার অনেক খাতে প্রণোদনা দিচ্ছে। শিক্ষাখাতে যেসব শিক্ষার্থী দরিদ্র তাদেরকে মোবাইল হ্যান্ডসেট দিয়ে সহযোগিতা করলে অনলাইন ক্লাস করা সম্ভব হতো। বানুরিয়া গ্রামের কলেজছাত্র অজেয় মানখিন জানায়, পাহাড়ের ৩০ গ্রামে মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। এখানকার অধিকাংশ শিক্ষার্থী দরিদ্র। অনলাইনে পড়াশোনার সুযোগ না থাকায় তার মতো শত শত দরিদ্র শিক্ষার্থী আনারস ও কলা বাগানে দিনমজুরি করছে। পড়াশোনার সঙ্গে অনেকের এখন আর সম্পর্কই নেই। অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আব্দুর রহিম জানান, সরকার সংসদ টিভির মতো দুই তিনটি টিভি চ্যানেল ভাড়া করে ক্লাস চালু করতে পারত। তাতে গ্রামের শিক্ষার্থীরা উপকৃত হতো।

মধুপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আব্দুর রশীদ এমন পরিস্থিতির সত্যতা স্বীকার করে জানান, মধুপুর উপজেলায় ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে স্নাতক পর্যন্ত ৩০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। এরা যাতে অনলাইনে ক্লাস করতে পারে এজন্য দুর্গম এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে ১৫টি ওয়াইফাই স্টেশন নির্মাণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এসব নির্মিত হলে কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবে শিক্ষার্থীরা।

রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035221576690674