প্রতিবছর এক শ্রেণি থেকে অন্য শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার সময় ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের শিক্ষার্থীদের (প্লে-গ্রুপ থেকে ‘এ’ লেভেল পর্যন্ত) কাছ থেকে পুনঃ ভর্তি ফি, সেশন ফি বা একাডেমিক ফি বা অন্য কোনো নামে ফি আদায় করা যাবে না বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বৃহস্পতিবার এ রায় দেন। রায়ে আদালত বলেছেন, শ্রেণি পরিবর্তন হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বার্ষিক পুনঃ ভর্তি ফি বা সেশন ফি নেওয়া বেআইনি।
এ-সংক্রান্ত পৃথক দুটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পাঁচ বছর ও তিন বছর আগে হওয়া রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে এই রায় দেওয়া হয়।
আদালত দেশের সব ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে দেশীয় সংস্কৃতি অনুসারে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় দিবসগুলো পালন, বঙ্গবন্ধু ও দেশের স্বাধীনতার ইতিহাস জানানো এবং শিক্ষার্থীদের বাংলা ভাষার ওপর গুরুত্ব দেওয়াসহ কয়েক দফা নির্দেশনা দিয়েছেন।
রায়ে ১৯৬২ সালের বেসরকারি বিদ্যালয় নিবন্ধন অধ্যাদেশ ও ২০০৭ সালের বেসরকারি (ইংরেজি মাধ্যম) বিদ্যালয় নিবন্ধন নীতিমালা অনুসারে দেশের প্রতিটি ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা– প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপনা কমিটি (ম্যানেজিং কমিটি) করা এবং তাতে অবশ্যই অভিভাবক প্রতিনিধি রাখতে বলা হয়েছে।
আদালত বলেছেন, ব্যবস্থাপনা কমিটি স্বচ্ছতার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফি ও বেতন নির্ধারণ করবে। নির্ধারিত ভর্তি ফি কেন নেওয়া হচ্ছে তাও অভিভাবকদের জানাবে। মাসিক টিউশন ফি বাড়াতে হলে অভিভাবকদের মতামত নিতে হবে। ফি বাড়ানোর ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা কমিটিতে যিনি অভিভাবক প্রতিনিধি থাকবেন, তাঁর মতামত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। তাঁর মতামত উপেক্ষা করতে হলে, যুক্তিসংগত কারণ দেখাতে হবে।
রায়ে বলা হয়, ব্যবস্থাপনা কমিটিই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ দেবে। শিক্ষক যে বিষয়ের ওপর ডিগ্রি অর্জন করেছেন, সে বিষয় পড়াবেন।
একটি রিট আবেদনের আইনজীবী অনীক আর হক বলেন, এসব স্কুলে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত আরও গুরুত্ব দিয়ে বাংলা ভাষা শেখাতে বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) শিক্ষা পরিসংখ্যান, ২০১৬ অনুযায়ী দেশে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে ১৫০টি। এগুলোতে ১ লাখ ৯৩ হাজার ২৭৪ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। তবে বাস্তবে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আরও বেশি হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী বেতন ও বিভিন্ন ধরনের ফি নিয়ে নানা অভিযোগ আছে।
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী গতকাল বলেন, ‘এই রায়ের জন্য আদালতকে সাধুবাদ জানাই। এখন আশা করব এই রায় কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।’
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অ্যাসিস্ট্যান্স ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোরশেদুল ইসলাম এই রায়কে ইতিবাচক উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, রায়ের কিছু বিষয় তাঁদেরই চাওয়া, যেমন বাংলার গুরুত্ব দেওয়া। ব্যক্তিগত মত হিসেবে তিনি বলেন, ফি নিয়ে কিছু প্রতিষ্ঠানে নৈরাজ্য যে হয় না তা নয়, কিন্তু সবাই তা করে না। সেভাবেই দেখতে হবে।