চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হতে রাজনীতিকদের কাছে ধরনা - Dainikshiksha

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হতে রাজনীতিকদের কাছে ধরনা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেতে আগ্রহী শিক্ষকদের কেউ কেউ রাজনীতিকদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। কয়েক মাস ধরে প্রায় নিয়মিত চলছে দৌড়ঝাঁপ। স্থানীয় রাজনীতিকেরা বিষয়টি নিয়ে মাথা ঘামানোয় বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।

বর্তমান উপাচার্য ইফতেখার উদ্দীন চৌধুরীর মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী শনিবার। ১৭তম উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেতে বর্তমান সহ–উপাচার্য শিরীণ আখতার, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মো. সেকান্দর চৌধুরী, হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সুলতান আহমেদ ও মো. হেলাল উদ্দিন নিজামীর নাম বেশি আলোচিত হচ্ছে। হেলাল উদ্দিন নিজামী ছাড়া বাকি তিনজনই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। হেলাল উদ্দিন প্রেষণে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন একরামুল হক।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, উপাচার্য পদে আসীন হতে সবচেয়ে বেশি তৎপর মো. সেকান্দর চৌধুরী। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও মন্ত্রী–সাংসদদের দুয়ারে তাঁকে দেখা যাচ্ছে।

উপাচার্য পদে আসীন হতে রাজনীতিবিদদের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন সেকান্দর চৌধুরী। চট্টগ্রামের প্রতিটি মন্ত্রী-উপমন্ত্রী এবং সাংসদ ছাড়াও দলীয় নেতাদের বাড়িতে যাতায়াত বাড়িয়ে দেন তিনি। রমজান মাসে রাজনৈতিক নেতা ও মন্ত্রী-সাংসদদের ইফতার মাহফিলে তাঁর সরব উপস্থিতি দেখা গেছে। এমনকি ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের সঙ্গেও তিনি সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন। উপাচার্য হওয়ার জন্য অনেকের কাছে তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

সেকান্দর চৌধুরীর এ রকম তৎপরতার বিষয়টি অনেকের নজরে এসেছে। এরপর একটি পক্ষ তাঁর বিরুদ্ধে ফেসবুকে প্রচারণা শুরু করেছে। এসব প্রচারণায় বলা হয়, বিএনপি–সমর্থিত দুই শিক্ষকের সুপারিশে তিনি শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। নব্বই দশকে তিনি গ্রুপ পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত শিক্ষকদের প্যানেলে চলে আসেন।

মো. সেকান্দর চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি প্রগতিশীল রাজনীতি করে আসছি। এ কারণে চট্টগ্রামের প্রতিটি মন্ত্রী ও সাংসদের সঙ্গে আমার নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়। তাই অনেকের ইফতার মাহফিলে গিয়েছি। ঈদের সময় শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি। এর সঙ্গে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের কোনো সম্পর্ক নেই।’

সেকান্দর চৌধুরী আরও বলেন, ‘সরকার আমাকে যোগ্য মনে করলে উপাচার্য হব। আর শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সময় আমার বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক সুপারিশ করেছেন। তাঁরা বিএনপি সমর্থন করতেন, এ প্রশ্ন আসবে কেন? সাবেক উপাচার্য আবু ইউসুফ আলমও (আওয়ামী লীগ–সমর্থিত) আমার জন্য সুপারিশ করেছিলেন।’

এ ছাড়া বর্তমান সহ–উপাচার্য শিরীণ আখতারের পক্ষে চট্টগ্রাম নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা সুপারিশ–সংক্রান্ত চিঠিতে সই করেছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এটি নজিরবিহীন ঘটনা হিসেবে দেখছেন অনেকে।

দলীয় সূত্র জানায়, শিরীণ আখতারকে উপাচার্য নিয়োগ করতে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাবউদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, দক্ষিণ জেলার সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান এবং উত্তর জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম সুপারিশ করেন। প্রধানমন্ত্রীকে সহ–উপাচার্যের লেখা চিঠিতে এই সুপারিশ করা হয়। ৩১ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত চিঠিতে সই করেন এই ছয় নেতা। স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষ ছয় নেতার সুপারিশ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে খোদ দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণ একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করে বলেন, আওয়ামী লীগ–সমর্থিত কোনো একজন শিক্ষক উপাচার্য হবেন। সরকার বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নামটি সংগ্রহ করে নেবে। কিন্তু রাজনৈতিক নেতাদের সুপারিশ শিষ্টাচারবহির্ভূত। এই শিক্ষক আরও বলেন, সহ–উপাচার্য হিসেবে শিরীণ আখতার বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ দায়িত্ব সুচারুভাবে পালন করে যাচ্ছেন। রাজনৈতিক নেতাদের সিলমোহর তিনি গায়ে লাগালেন কেন?

জানতে চাইলে সহ–উপাচার্য শিরীণ আখতার বলেন, ‘আমার প্রতি নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের সহানুভূতি আছে। কারণ, আমার বাবাও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তবে তাঁদের সুপারিশসংক্রান্ত চিঠি কাউকে দেওয়া হয়নি। তা আমার কাছে আছে।’

উপাচার্য নিয়োগে দলীয় নেতাদের সুপারিশ কেন জানতে চাইলে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘আদর্শিক কারণে শিরীণ আখতারের পক্ষে সুপারিশ করেছি। সহ–উপাচার্য হিসেবে তিনি সফল।’

এদিকে উপাচার্য পদে আসীন হতে কোনো কোনো শিক্ষক টানা দেড় থেকে দুই মাস তদবির করে যাচ্ছেন। একজন শিক্ষক রাজনৈতিক নেতার পা ছুঁয়ে সালাম করছেন। আবার দৌড়ে যাচ্ছেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতার কাছে। এসবের অডিও–ভিডিও ও স্থির ছবি কেউ কেউ সংগ্রহে রাখছেন। ফলে নানা সমালোচনা শুরু হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, সর্বশেষ ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ মে সিনেটের মাধ্যমে উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মেয়াদ চার বছর। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ছাত্রশিবিরের আন্দোলনের মুখে ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ ডিসেম্বর তৎকালীন উপাচার্য আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীনকে সরিয়ে দেয় তৎকালীন বিএনপি সরকার।

সিনেটে নির্বাচিত আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীনকে সরিয়ে দেওয়ার পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগে রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো শুরু হয়। শিক্ষকদের মামলার কারণে সিনেটের মাধ্যমে উপাচার্য নিয়োগের বিষয়টি বন্ধ রয়েছে। ফলে এই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না কিংবা মামলা উঠিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে উপাচার্য নিয়োগের সময় এলে রাজনৈতিক তৎপরতা বেড়ে যায়। কারণ, সিনেট অকার্যকর।

রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.004655122756958