বেকার-ভাতা দেয়ার চিন্তা সরকারের - দৈনিকশিক্ষা

বেকার-ভাতা দেয়ার চিন্তা সরকারের

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণে ‘বেকার ভাতা’ দেওয়ার বিষয়টি চিন্তা করছে সরকার। ‘সামাজিক নিরাপত্তা (ব্যবস্থাপনা) আইন, ২০১৯’ শীর্ষক নতুন একটি আইন প্রণয়নের কাজে হাত দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রস্তাবিত আইনটির খসড়ায় সমাজের পিছিয়ে থাকা মানুষের জীবনচক্র যেন নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যে থাকে সে বিষয়টি বিবেচনায় থাকছে।

প্রস্তাবিত খসড়াটি আইনে পরিণত হলে দরিদ্র সব নাগরিকের ‘জীবনচক্র’ সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় চলে আসবে। একজন মানুষের ভ্রূণ থেকে শুরু করে শৈশব, কৈশোর, যুবক ও প্রবীণ বয়স অর্থাৎ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আটটি গুচ্ছভাগে বিভক্ত করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় নিরাপত্তামূলক কাজ করবে।

খসড়া আইনে একজন মানুষের জীবনচক্রকে পাঁচটি ‘বিষয়ভিত্তিক ক্লাস্টার’-এ অভিহিত করা হয়েছে। প্রতিটি ক্লাস্টার বাস্তবায়নে আলাদা কমিটি থাকবে। ক্লাস্টারগুলো হলো ১. সামাজিক ভাতা; ২. খাদ্য নিরাপত্তা ও দুর্যোগ সহায়তা; ৩. সামাজিক বীমা; ৪. শ্রম ও জীবিকায়ন; ৫. মানব উন্নয়ন, সামাজিক ক্ষমতায়ন ও প্রশিক্ষণ। এই ক্লাস্টারগুলোর আওতাধীন ক্ষেত্রগুলোতে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা দিতে আট থেকে ১০টি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে একটি করে কমিটি থাকবে।

আইনটির সুফল সংশ্লিষ্ট সবার কাছে পৌঁছাতে মোট ছয়টি তদারকি কমিটি থাকবে। আর সার্বিকভাবে বিষয়টি দেখভাল করবেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। ‘সামাজিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত জাতীয় পরিষদ’-এর নেতৃত্বে থাকবেন অর্থমন্ত্রী। মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে ৩৫ জন সচিবের ‘কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা কমিটি’ থাকবে। এর বাইরে বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনিক ইউনিটের শীর্ষ কর্মকর্তা কমিটিগুলোর প্রধান হবেন।

সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে ‘রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি’র ১৫ অনুচ্ছেদ থেকেই আলোচ্য আইনটি উৎসারিত। এতে ‘মৌলিক প্রয়োজনের ব্যবস্থা’ শীর্ষক অংশে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হইবে পরিকল্পিত অর্থনৈতিক বিকাশের মাধ্যমে উৎপাদন শক্তির ক্রমবৃদ্ধিসাধন এবং জনগণের জীবনযাত্রার বস্তুগত ও সংস্কৃতিগত মানের দৃঢ় উন্নতিসাধন।’ এই অনুচ্ছেদের উপদফা ঘ-তে বলা হয়েছে, ‘সামাজিক নিরাপত্তার অধিকার, অর্থাৎ বেকারত্ব, ব্যাধি বা পঙ্গুত্বজনিত কিংবা বৈধব্য, মাতৃপিতৃহীনতা বা বার্ধক্যজনিত কিংবা অনুরূপ অন্যান্য পরিস্থিতিজনিত আয়ত্তাতীত কারণে অভাবগ্রস্ততার ক্ষেত্রে সরকারি সাহায্য লাভের অধিকারী’ হবে মানুষ।

বেকার ভাতা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে প্রস্তাবিত খসড়ার ‘সামাজিক বীমা ক্লাস্টার’-এর আওতায়। এই ক্লাস্টারটির নেতৃত্বে রয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এই ক্লাস্টারের মূল কাজের বিষয়ে প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, বিদ্যমান বীমা কার্যক্রমগুলো সমন্বয়ের মাধ্যমে দেশের, বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের জন্য বার্ধক্য পেনশন, বেকারত্ব ভাতা, দুর্ঘটনা, পঙ্গুত্ব, মাতৃত্ব ঝুঁকি ইত্যাদি টেকসই সামাজিক বীমা ব্যবস্থার আইনি এবং প্রাতিষ্ঠানিক অবকাঠামো স্থাপন ও পরিচালনা ব্যবস্থা তদারকি করা।

সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমগুলোর আর্থিক সহায়তা বা ভাতা সরাসরি ‘সরকার থেকে ব্যক্তি’ (জি টু পি) পদ্ধতিতে সম্পন্নের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ‘সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা প্রাপ্তির যোগ্যতা’র বিষয়ে খসড়ায় ২৮ ধারায় বলা হয়েছে, সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা প্রাপ্তির যোগ্যতা ও অযোগ্যতা শর্তগুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। এই ক্ষেত্রে ‘দারিদ্র্য স্কোর’ ব্যবস্থা চালুর বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে, ‘দারিদ্র্য স্কোরভিত্তিক খানা জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতে জাতীয় পরিষদ অথবা স্থানীয় এনজিওর সহায়তায় উপজেলা কমিটি যাচাইপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে।’ নির্ধারিত যোগ্যতা পূরণ করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সামাজিক নিরাপত্তা প্রাপ্তির আবেদন করতে পারবে। আবেদন পাওয়ার পর ‘যথাশীঘ্র’ সম্ভব আবেদন যাচাই-বাছাই করে আবেদনকারীকে সিদ্ধান্ত জানাতে হবে।

কেউ যদি মিথ্যা তথ্য, অনৈতিক প্ররোচনার মাধ্যমে ভাতা গ্রহণ করে বা একই পদ্ধতিতে কেউ যদি সুবিধা পাওয়ার মতো ব্যক্তিকে নিজ গাফিলতি বা প্রতিবন্ধকতার কারণে বঞ্চিত করে তাহলে উভয় ক্ষেত্রেই প্রস্তাবিত আইনের অধীনে অপরাধ বলে গণ্য হবে। এসব অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।

বেকারত্ব, ব্যাধি, পঙ্গুত্ব, বার্ধক্যসহ অন্যান্য বিষয় ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে কার্যকর হওয়া সংবিধানে লিপিবদ্ধ আছে। কিন্তু সংবিধানের ৮ অনুচ্ছেদের ২ দফা অনুযায়ী এসব অধিকারের বিষয়ে আদালতে যাওয়ার পথ বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এসব নীতির আলোকে আইন প্রণয়ন করা যাবে, কিন্তু ‘আদালতের মাধ্যমে বলযোগ্য হইবে না’ অর্থাৎ এসব দাবি বাস্তবায়নের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হওয়া যাবে না।

তবে সরকার যেহেতু এখন নিজ থেকে উদ্যোগ নিচ্ছে এবং প্রস্তাবটি সংসদে পাস হয়ে যদি আইনে পরিণত হয় তাহলে এসব অধিকার পাবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। তখন যদি কেউ যোগ্য হওয়ার পরও প্রদত্ত সুবিধা না পায় তাহলে আদালতে যেতে পারবে।

রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.011200904846191