মাদরাসার টাকা যেত প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নেতাদের পকেটে - দৈনিকশিক্ষা

মাদরাসার টাকা যেত প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নেতাদের পকেটে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তিনি করেননি। যৌন নিপীড়ন, অর্থ আত্মসাৎ, সার্টিফিকেট বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্যসহ সকল অপকর্মের হোতা তিনি। শনিবার (২০ এপ্রিল) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আবুল খায়ের।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, তদন্তকারী কর্তৃপক্ষের অনুসন্ধান, এলাকাবাসী, মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময় গভর্নিং বডি এবং প্রশাসনের কাছে দেওয়া অভিযোগে একের পর এক বেরিয়ে আসছে অধ্যক্ষ সিরাজের অপকর্মের কাহিনী।

তার অর্থ আত্মসাতের উৎস হলো মাদরাসার নিজস্ব আয় ও সরকারি বরাদ্দের টাকা। এসব অর্থের ৫০ ভাগ গভর্নিং বডি, স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতা ও প্রশাসনের একশ্রেণির কর্মকর্তাকে নিয়মিত মাসোহারা হিসাবে দিতেন। বিনিময়ে অপকর্ম ও অর্থ আত্মসাৎ করেও তিনি থাকতেন নিরাপদে। ওই মাদরাসার গভর্নিং বডি গতকাল বাতিল করেছে সরকার।

এদিকে, গত ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির গায়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাদরাসার পরিচালনা পরিষদের সহ-সভাপতি রুহুল আমিনকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই।

এই নেতার কাছে অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও আত্মসাতের অনেক ঘটনার প্রতিকার চেয়ে নিহত শিক্ষার্থী নুসরাত, শিক্ষক, অভিভাবকরা আবেদন করেছিলেন। তিনি কোনো প্রতিকার তো করেননি উল্টো সিরাজের পক্ষাবলম্বন করেন। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করার কাজে অধ্যক্ষকে সহায়তা করতেন রুহুল।

জানা গেছে, সোনাগাজী ফাজিল মাদরাসার এক ছাত্রীকে গত বছরের অক্টোবর মাসে যৌন নিপীড়ন করেন অধ্যক্ষ। এই ছাত্রীর পিতা প্রতিকার চেয়ে গভর্নিং বডির কাছে আবেদন করেন। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা তো নেয়া হয়নি উল্টো ছাত্রীর অভিভাবক নাজেহাল হন।

অভিযোগ রয়েছে, এই মাদরাসায় পড়েনি কিংবা শিক্ষকতাও করেননি কোনোদিন- এমন ভুয়া শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কাছে ২৫ হাজার টাকায় সার্টিফিকেট বিক্রি করতেন অধ্যক্ষ সিরাজ। টাকা নেওয়ার পাশাপাশি অনেক নারীকে যৌন নিপীড়নও করেছেন তিনি। সার্টিফিকেটের বিনিময়ে তিনি পেতেন নারীর সাহচার্য। খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ করেও লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য করেছেন এই সিরাজ।

মোট কথা অর্থ ছাড়া তিনি কোনো কাজ করেননি। এটাই ছিল তার নেশা। অধ্যক্ষ সিরাজ ভুয়া সার্টিফিকেট দিয়ে এক গডফাদার ও গভর্নিং বডির সদস্যদের মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে এই মাদরাসার অধ্যক্ষের পদটি বাগিয়ে নেন। অধ্যক্ষ সিরাজের বিরুদ্ধে এ ধরনের ১৮টি দুর্নীতি, অনিয়ম সম্পর্কে গভর্নিং বডির সদস্য আব্দুল মান্নান প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেন। মাদরাসার শিক্ষকদের পক্ষ হতে এক ডজনেরও অধিক শিক্ষক সিরাজের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেন। কিন্তু প্রশাসন কিংবা গভর্নিং বডির পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং অভিযোগকারীদের তিরস্কার করা হয়েছে।

‘যৌন নিপীড়ক’ অধ্যক্ষ সিরাজ জামায়াতের সক্রিয় নেতা হয়েও শুধুমাত্র স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক শ্রেণির নেতা ও প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তাদের ‘ফিফটি ফিফটি’ ভাগ দিয়ে অপকর্ম চালিয়ে গেছেন। এ কারণে স্থানীয়ভাবে তিনি ‘ফিফটি ফিফটি’ সিরাজ নামেও পরিচিতি।

কে এই রুহুল আমিন: ফেনী প্রতিনিধি জানান, রুহুল আমিন ওরফে গুজা রুহুল সম্পর্কে সোনাগাজীর আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, তার বাড়ি উপজেলার মধ্যম চর চান্দিয়া কুচ্চাখোলা গ্রামে। সোনাগাজীর তাকিয়া রোডের জেলে পাড়া এলাকায় বসবাস করেন। তারা দুঃখ করে বলেন, কিছু হাইব্রিড নেতাকে আওয়ামী লীগের নব্য নেতা বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। রুহুল আমিনের চৌদ্দগোষ্ঠী বিএনপি করে। সে-ও আগে কোনোদিন আওয়ামী লীগ করেনি। তাকে হঠাৎ করে দলের উপজেলা সভাপতি করে দেওয়ায় এলাকার প্রবীণ নেতারা ক্ষুব্ধ ছিলেন।

অধ্যক্ষ সিরাজের পরিবার বাড়ি ছাড়া: নুসরাত হত্যার ঘটনার পর অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার স্ত্রী সোনাগাজী জনতা ব্যাংক থেকে ১৮ লাখ টাকা উত্তোলন করেন। অভিযোগ রয়েছে, স্বামীকে বাঁচানোর জন্য ওসিকে ১০ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়। এ ঘটনার পর থেকে সন্তানদের নিয়ে তিনি এলাকা ছেড়ে চলে যান। এলাকাবাসী জানান, অধ্যক্ষের স্ত্রীকে গ্রেফতার করতে পারলে টাকার উৎসসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ঘাটিত হবে।

রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0046560764312744