শিক্ষক হয়েই মায়ের বিমানে চড়ার শখ পুরণ করলো ছেলে - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষক হয়েই মায়ের বিমানে চড়ার শখ পুরণ করলো ছেলে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

মনে করো, যেন বিদেশ ঘুরে, মাকে নিয়ে যাচ্ছি অনেক দূরে। তুমি যাচ্ছ পালকিতে, মা, চ’ড়ে, দরজা দুটো একটুকু ফাঁক ক’রে, আমি যাচ্ছি রাঙা ঘোড়ার ’পরে, টগবগিয়ে তোমার পাশে পাশে।

শিপনের উঠে আসার গল্পটা অনেক সংগ্রামের। শুরু হয়েছিল সেই ১০ বছর বয়সে। রিকশা চালিয়ে প্রথম রোজগার। বাড়ি বাড়ি গিয়ে তেল-কাঁকড়া-সবজি-মাছ-শুঁটকি বিক্রি, অন্যের বাড়িতে কাজ, নরসুন্দরের কাজ, গরুর গোবর দিয়ে লাকড়ি বানিয়ে বিক্রি, বর্গা চাষ-কী করেননি! এবার মায়ের স্বপ্নটাও পূরণ করলেন তিনি।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বীরপুরুষ’ কবিতার মতোই শিপন রায় মাকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলেন। তবে কবিতার ঘোড়া আর পালকির বদলে মাকে চড়িয়েছেন বিমানে। জীবনে প্রথমবার বিমানে চড়ে মা বেশ খানিকটা ভয় পেলেও চোখে-মুখে ছিল খুশির ঝিলিক। 

চাকরি পেয়েই মাকে বিমানে চড়িয়ে একটি স্বপ্ন পূরণ করেছেন শিপন রায়। শিক্ষক হতে চেয়েছিলেন তিনি। গত মঙ্গলবার পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রকাশিত ফলাফলে (স্পেশাল নন-ক্যাডার) সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তাঁকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়েছে। মায়ের ইচ্ছে ছিল বিমানে চড়ার। তাইতো নিজের স্বপ্ন পূরণ হওয়ার কাছাকাছি এসে মায়ের স্বপ্নটাকে বাস্তবে রূপ দিতে আর তর সয়নি। ধারদেনা করেই মায়ের স্বপ্নটা পূরণ করলেন। বিমানে পাশে বসিয়ে ঢাকা থেকে মাকে নিয়ে গেলেন চট্টগ্রামে।

উড়োজাহাজে মাকে নিয়ে শিপন। 
ছবি: সংগৃহীত

শিপন রায় টেলিফোনে বলেন, ‘মাকে সেভাবে কখনো হাসতে দেখিনি। একদিকে আমি শিক্ষক হতে যাচ্ছি সেই খুশি, অন্যদিকে বিমানে চড়ার স্বপ্নপূরণ-সব মিলে মায়ের চোখেমুখে যে তৃপ্তি দেখেছি, তা বলার ভাষা আমার নেই। মাকে সারা জীবনেও এভাবে হাসতে দেখিনি।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে মাস্টার্স পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি পেয়েছিলেন শিপন। এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল করার অনুমোদন পেয়েছেন।

বিদায়ী বছরে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার আগে শিপন টিউশন করতেন। করোনায় সেটি বন্ধ হয়ে গেলে গ্রামে গিয়ে বর্গা চাষ শুরু করেন। গত ১ আগস্ট শিপনের সংগ্রামের কাহিনি নিয়ে ‘মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণি পাওয়া শিপনের শুধু অভাব আর অভাব’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

ফেসবুকভিত্তিক সংগঠন পে ইট ফরওয়ার্ড, বাংলাদেশের বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থী ছিলেন শিপন। ওই সংগঠনের কাছ থেকেই ১০ হাজার টাকা সহায়তা নিয়ে ফেনীর চরচান্দিয়া গ্রামে ৭০ শতক জায়গায় নিজেই আমনের বর্গা চাষ করেন শিপন। এরপর ঋণ নিয়ে গরু কিনেছিলেন, তবে সেটি মারা যাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন তিনি।

শিপনের মা গীরু বালা রায় অন্যের জমি ও বাড়ি-বাড়ি কাজ করে ছেলেমেয়েদের বড় করেছেন। শিপনের এক ভাই নরসুন্দরের কাজ করেন। আরেক ভাই রিকশা চালান। বলতে গেলে নিজেদের কোনো জায়গাজমি নেই। বাবা স্বপ্ন রায় মানুষের জমিতে দিনমজুরি করতেন। তিনি মারা গেছেন অনেক আগে। এক বোনের বিয়ে হয়েছে।

আরেক বোনের স্বামী মারা গেলে তিনি বোন ও তাঁর দুই সন্তানের খরচ জুগিয়েছেন।

শিপন বলেন, ‘গ্রামে ফেরার পর মাকে দেখতে খালা, মাসিরা এসেছিলেন। বিমানে চড়তে কেমন লাগে জানতে চেয়েছেন। ছেলের তেমন কোনো সামর্থ্য নেই, শুধু চাকরির জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েই মায়ের শখ পূরণ করেছি বলে আমাকেও অনেকে দোয়া করেছেন।’

নিজের ও পরিবারকে টিকিয়ে রাখার যুদ্ধ, স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ নিয়ে শিপন বলেন, ‘টিকে থাকার সংগ্রামে এ পর্যন্ত কত যে কাজ করেছি! এত দিনে আমি আমার স্বপ্ন পূরণের পথে হাঁটা শুরু করলাম। আমি শিক্ষক হতে চেয়েছিলাম, সেই শিক্ষকতাই এখন আমার পেশা হবে।’

শিপন নিজস্ব উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন প্যারেন্টস কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি সংগঠন। রাস্তার পাশে পড়ে থাকা মানসিক প্রতিবন্ধী মানুষের চুল, দাড়ি কেটে দেন সংগঠনের সদস্যরা। সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ আহত হলে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়াসহ অন্যান্য কাজ করার চেষ্টা করেন তাঁরা।

সূত্র: প্রথম আলো

রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003899097442627