সমাবর্তনে অনীহা জবি প্রশাসনের - দৈনিকশিক্ষা

সমাবর্তনে অনীহা জবি প্রশাসনের

জবি প্রতিনিধি |

বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষে কালো গাউন পরে সমাবর্তনের মাধ্যমে মূল সনদ নিয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের স্বপ্ন প্রতিটি শিক্ষার্থীর। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের একযুগেও সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনাগ্রহের জন্যই প্রায় ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর সমাবর্তন হচ্ছে না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। তাই সমাবর্তন ছাড়াই সাময়িক সনদ নিয়েই ক্যাম্পাস ছাড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, ‘যারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে গেছেন তাদের নিয়ে আমরা চিন্তিত না। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানেই প্রশাসন নজর দিচ্ছেন। আর সমাবর্তন আয়োজনে যথেষ্ট জায়গা আমাদের নেই। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি ছাড়াও হাজার হাজার মানুষ আসেন তাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বল্প জায়গা বা খেলার মাঠে পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকায় সমাবর্তন আয়োজন সম্ভব না। তাছাড়া এখানে রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার একটা বিষয় আছে।’ কেরানীগঞ্জে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ণাঙ্গ ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর এখন তা ভূমি মন্ত্রণালয় ও রাজউকে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে, যা স্বল্প সময়ের মধ্যে অধিগ্রহণ হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে ২০১৮ সালে সমাবর্তন আয়োজনের কোন পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি অধিগ্রহণের পরেই সমাবর্তনের আয়োজন করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, ২০০৫ সালে জাতীয় সংসদে এক আইন পাসের মাধ্যমে তত্কালীন জগন্নাথ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপান্তরিত হওয়া জগন্নাথ কলেজের ২০০৩-০৪ এবং ২০০৪-০৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী ২০০৩-০৪ এবং ২০০৪-০৫ বর্ষের সনাতন পদ্ধতির স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ ১৯২৭১ জন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ পাবেন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষের ২২৬৪ জন, ২০০৬-০৭ শিক্ষাবর্ষের ২১৯১ জন, ২০০৭-০৮ শিক্ষাবর্ষের ১৬০৪ জন, ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের ১৭৯৩ জন, ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের ১৯৩৬ জন, ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের ১৮২৩ জন, ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ১৫০৮ জন শিক্ষার্থী স্নাতক শেষ করেন।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শেষ করা এ সকল শিক্ষার্থীর জন্য প্রশাসন সমাবর্তনের আয়োজন করেনি। বরং ২০১৪ সালের ১৬ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নোটিসে শিক্ষার্থীরা মূল সনদ নিতে পারবেন বলে জানানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সে সময় সমাবর্তন আয়োজনে অভিজ্ঞ লোকের অভাব বলে জানান। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সমাবর্তন আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা সংকটের অজুহাত দেখান। সমাবর্তন আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাবেক এবং বর্তমান শিক্ষার্থীরা। সমাবর্তনের দাবিতে তারা বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধন করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা বিভিন্ন সময় গ্রুপ করে সমাবর্তনের দাবি জানিয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বড় চাওয়া, আনুষ্ঠানিকভাবে একটা কালো গাউন আর সনদ। যে যার মতো সনদ নিয়ে চলে যাবেন, এটা কাম্য নয়।

সমাবর্তন প্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের দাবি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে প্রতিষ্ঠিত এমন বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এমনকি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে রাজধানীতে অবস্থিত হয়েও জবিতে সমাবর্তন হচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সমাবর্তন আয়োজনের সদিচ্ছা থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠেই তা আয়োজন করা সম্ভব। তাছাড়া কেরানীগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিজস্ব জায়গা ক্রয় করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিশ্ববিদ্যালয়কে ২০০ একর জমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দিয়েছে। চাইলে সেখানে সমাবর্তনের আয়োজনে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার অজুহাতে পুরান ঢাকায় যে সমাবর্তন আয়োজন সম্ভব নয় বলছে তা ঠুনকো অজুহাত ছাড়া কিছু না। কারণ রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

জবি সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট সভাপতি মুজাহিদ অনিক বলেন, উচ্চ শিক্ষা শেষে কাল গাউন পরে সমাবর্তনের মাধ্যমে মূল সনদ নিয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের স্বপ্ন প্রতিটি শিক্ষার্থীর। সেখানে উপাচার্যের এ সকল তুচ্ছ অজুহাত কাম্য নয়। অতি শীঘ্রই জবিতে সমাবর্তনের আয়োজন করে প্রশাসন সাধারণ শিক্ষার্থীদের আশার প্রতিদান দিবে বলে আমার বিশ্বাস।

রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি - dainik shiksha রোববার থেকে সরকারি প্রাথমিকে মর্নিং স্কুল, খোলার প্রজ্ঞাপন জারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী - dainik shiksha গরমে কলেজে কোচিং, দুদিনে অসুস্থ ৮ ছাত্রী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha নিবন্ধিত শিক্ষক নিয়োগে এনটিআরসির নতুন নির্দেশনা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট - dainik shiksha জাল সনদে চাকরি করছে কয়েক হাজার হেলথ টেকনোলজিস্ট ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের - dainik shiksha ফের আন্দোলনের হুশিয়ারি চুয়েট শিক্ষার্থীদের আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ - dainik shiksha আইনি লড়াইয়ে যাচ্ছেন শিক্ষক নেতা কাওছার শেখ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0070080757141113