ঘুষের রাজকীয় ফন্দি, শিক্ষা উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চান আতঙ্কিত শিক্ষকরা | কলেজ নিউজ

ঘুষের রাজকীয় ফন্দি, শিক্ষা উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ চান আতঙ্কিত শিক্ষকরা

নাম না প্রকাশের শর্তে রাজবাড়ীর একজন এমপিও শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘সাত বছর আগে একবার এই অধিদপ্তর থেকে অডিটে এসেছিলেন সরকারি কলেজের দুইজন শিক্ষক। কিন্তু আমাদের কাছে পরিচয় দিয়েছেন তারা ‘মিনিস্ট্রি অডিটর’ তারা অফিসার।’

#শিক্ষা উপদেষ্টা #ঘুষ #ডিআইএ #অডিটর #শিক্ষা মন্ত্রণালয়

ঘুষের রাজকীয় ফাঁদ দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন কয়েকশ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী। আতঙ্কিত শিক্ষকরা টেলিফোন করছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং এর অধীনস্ত পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরে। তারা নিশ্চিত হতে চাইছেন রাজবাড়ী জেলা সদরের এবং কালুখালী উপজেলার ডজনখানেক এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনো অডিটর পাঠিয়েছেন কি-না। কিন্তু কোনো জবাব পাননি শিক্ষকরা। মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষকদের ডিআইএতে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

আর ডিআইএ কর্মকর্তারা কোনো জবাব দিচ্ছেন না। এমতাবস্থায় ঘুষ ও খারাপ আচরণ থেকে রক্ষা পেতে এবং তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো অডিট করার আদেশের কপি কেন ওয়েবসাইটে থাকবে না তা খতিয়ে দেখতে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার-এর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। অভিযোগকারীদের নাম প্রকাশ হলে ঘুষের রেট বাড়বে, হয়রানিও বাড়বে তাই শিক্ষকরা দৈনিক শিক্ষাডটকম-এর কাছে অনুরোধ করেছেন তাদের নাম, পরিচয় গোপন রাখতে।

আরো পড়ুন:

মোল্লাহাটের শিক্ষকদের মধ্যে ‘মিনিস্ট্রি অডিটর’ আতঙ্ক

অডিট দলের বিরুদ্ধে তিন শিক্ষা বোর্ড থেকে ঘু*ষ নেয়ার অভিযোগ

পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেখা যায় দেশের বিভিন্ন জেলার অনেক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন ও নিরীক্ষার অফিস আদেশ। কোন কর্মকর্তা কোন প্রতিষ্ঠানে যাবেন, কতদিন থাকবেন, কী কী অডিট করবেন সবকিছু পরিষ্কার লেখা। কিন্তু রাজবাড়ী জেলার কোনো প্রতিষ্ঠানের নাম নেই। ইতিমধ্যে দুইজন কর্মকর্তা অডিট করবেন বলে যোগাযোগ শুরু করেছেন। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানেও গেছেন, শিক্ষকদের সঙ্গে কথাও বলেছেন।

ইঙ্গিত দিয়েছেন ঢাকায় যোগাযোগ করতে, নইলে এমন প্রতিবেদন দেবে যাতে সারাজীবনের এমপিওর টাকা কোষাগারে ফেরত দিতে হয়। আবার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলেও লাভ হবে না বলেও সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, অভিযাগ তদন্তে আসবেন ডিআইএর কর্মকর্তারাই। এরপর ভুয়া অভিযোগের দায়ে এমপিও শিক্ষকদের বরখাস্ত করা সহজ কাজ। একজন উপদেষ্টার আত্মীয় পরিচয় দিয়েছেন একজন কর্মকর্তা। শিক্ষকদের কাছ থেকে এমন অভিযোগ পেয়ে অনুসন্ধান শুরু করে দৈনিক শিক্ষাডটকম। জানা যায়, ডিআইএর সর্বশেষ অডিট আদেশের মধ্যে রাজবাড়ীর কোনো আদেশ নেই। এ বিষয়ে ডিআইএর কর্মকর্তাদের কাছে প্রশ্ন করলেও পুরো উত্তর মেলেনি। অন্য অনেক জেলার প্রতিষ্ঠান অডিটের অফিস আদেশ থাকলেও রাজবাড়ীরটা নেই কেন—এমন প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়নি। তবে, রাজবাড়ীতে দুইজনের টিম গিয়েছে এমন তথ্যের সত্যতা মিলেছে। জানা গেছে, ১৮ জুন শুরু হয় অডিট। আগামী ২৯ জুন পর্যন্ত চলবে। এসময় পরিদর্শকরা বেসরকারি স্কুল ও কলেজগুলোর ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের পহেলা জুলাই থেকে ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ের আর্থিকসহ বিভিন্ন নথিপত্র যাচাই করবেন।

আরো পড়ুন:

মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা!

ঘুষ নিতে মিনিস্ট্রি অডিটরদের স্বামী, এমপিও শিক্ষকরা আতঙ্কে

পরিদর্শনের সময় শিক্ষাগত যোগ্যতা, অভিজ্ঞতার মূল অথবা সাময়িক সনদ, সরকারি বেতন ভাতাদির ব্যাংক বিবরণী দেখাতে হবে। এছাড়াও স্তরভিত্তিক প্রথম এমপিওর সরকারি আদেশ; এমপিও কপি ও তথ্যের মূল কাগজ এবং বিগত পরিদর্শনের পর থেকে নিয়োগ পাওয়া সব শিক্ষকসহ কর্মচারীকে মূল রেকর্ড প্রদর্শন করতে হবে।

শিক্ষার মান উন্নয়নে বিভিন্ন সুপারিশ করা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিবেশগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর নিয়মিত কাজের অংশ। বছরব্যাপী ডিআইএ কর্মকর্তারা সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পরিদর্শন করেন এবং তাদের কার্যক্রম মূল্যায়ন করেন।

নাম না প্রকাশের শর্তে রাজবাড়ীর একজন এমপিও শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘সাত বছর আগে একবার এই অধিদপ্তর থেকে অডিটে এসেছিলেন সরকারি কলেজের দুইজন শিক্ষক। কিন্তু আমাদের কাছে পরিচয় দিয়েছেন তারা ‘মিনিস্ট্রি অডিটর’, তারা অফিসার।’

আরো পড়ুন:

ঘুষ চাওয়ায় ধোলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাকে

তিনি বলেন, ‘পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তারা মূলত সরকারি কলেজের প্রভাষক। সরকারি চাকরিতে তাদের এন্ট্রি পদ প্রভাষক আর সর্বোচ্চ পদ অধ্যাপক। কিন্তু মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে অডিটর ও পরিদর্শক তকমা লাগিয়ে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পকেট কাটার কাজে ন্যাস্ত তারা। অডিট করতে এসে খুব খারাপভাবে কথা বলেন এমপিওশিক্ষকদের সঙ্গে।’

তিনি আরো বলেন, ‘সেবার আমাদের এলাকার ত্রিশ প্রতিষ্ঠানের সবার একমাসের এমপিওর টাকা ‘মিনিস্ট্রি অডিটরদের’ দিতে হয়েছে। পুরো টাকাটা নিয়েছেন প্রতিষ্ঠান প্রধানদের মাধ্যমে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিআইএর একাধিক কর্মকর্তা বলেন, কয়েকবছর আগে ডিআইএর এক অনুষ্ঠানে এসে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছিলেন, ‘আপনারা ঘুষ খান, তবে কম করে খান’।

তিনি বলেন, মন্ত্রীর পরামর্শ শুনেছেন এমন কোনো প্রমাণ মেলেনি। কয়েকমাস আগেও কক্সবাজারে গিয়ে ঘুষ দাবি করে ধোলাই খেয়েছেন মাসুম নামের সাবেক এক ছাত্রলীগ কর্মীর দাবিদার।

তিনি আরো বলেন, আগে বেপরোয়া ঘুষখোররা পরিচয় দিতেন তারা সাবেক ছাত্রলীগার, নতুনদের পরিচয় তারা সাবেক ছাত্রদল অথবা শিবির। কেউ কেউ সাবেক ছাত্রদল নেতার স্ত্রী পরিচয়ে ঘুষ নিচ্ছেন। কেউবা সৎ ও নিরপেক্ষ একজন

উপদেষ্টার আত্মীয়ের ভুয়া পরিচয় দিয়ে ডিআইএর কাউকে থোড়াই কেয়ার করছেন। অডিট আদেশের কপি ওয়েবসাইটে দিতে পারছেন না। কারো বা বিচারক আত্মীয় পরিচয় দিয়ে বস ও সহকর্মীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে চলছেন।

ডিআইএর একজন সাবেক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, গত বছরের পাঁচ আগস্টের কয়েকদিন পরে শয়তানের ‘শ’ ও ছাগলের ‘ছ’ যুক্ত নামের একজন কর্মকর্তা কুষ্টিয়া ও পটুয়াখালীতে গিয়েছিলেন। কুষ্টিয়ার কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সাক্ষরিত অনেকগুলো এক সাইজের কাগজ নিয়ে এসেছেন। এমন অভিযোগ গোটা শিক্ষা ক্যাডারের প্রায় সবার মুখে মুখে।’

এদিকে রাজবাড়ী জেলার দশটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের অডিট নিয়ে ব্যস্ত থাকার খবর পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে : কালুখালী উপজেলার লাড়ীবাড়ী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়; রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানাপুর তমিজ উদ্দীনখান উচ্চ বিদ্যালয়, বাবুপুর কছিম উদ্দিন বিদ্যাপীঠ, রাজিয়া বেগম উচ্চ বিদ্যালয়, বেথুলিয়া বারলাহুরিয়া

সিদ্দিকীয়া ফাযিল মাদরাসা , মরডাংগা সেকান্দারিয়া সিনিয়র মাদরাসা, বাড়াইজুরী গরীবশাহ দাখিল মাদরাসা, সূর্যনগর উচ্চ বিদ্যালয় এবং আর. এস. কে ইন্সটিটিউশন (রাজা সূর্য কুমার ইন্সটিটিউশন)।

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

বি : দ্রষ্টব্য : দৈনিক শিক্ষাডটকম-এ আজ ২৪ জুন সন্ধ্যায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর রাত নয়টার দিকে ডিআইএর ওয়েবসাইটে রাজবাড়ীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা ও আদেশের কপি সংযুক্ত দেখা গেছে। বিকেল পাঁচটা অব্দি আদেশের কপি দেখা যায়নি।

#শিক্ষা উপদেষ্টা #ঘুষ #ডিআইএ #অডিটর #শিক্ষা মন্ত্রণালয়