রাষ্ট্রের উন্নতির জন্য সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের গবেষণায় বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন। রোববার (৪ মে) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে তিনি এই বিষয়ে পোস্ট দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক লিখেছেন, ‘আগামীকালের মধ্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৬ রিসার্চ সেন্টারের মধ্যে ৫০টি বন্ধ করে দেওয়া। এই ৫০টি রিসার্চ সেন্টারের বরাদ্দ থেকে যে অর্থের সাশ্রয় হবে, সঙ্গে সরকার থেকে আরো টাকা এনে, বাকি রিসার্চ সেন্টারগুলোকে সত্যিকারের রিসার্চ সেন্টার করে গড়ে তোলা উচিত।’
তিনি আরো লেখেন, ‘বিশেষ করে সেমিকন্ডাক্টর রিসার্চ সেন্টারের জন্য বিশেষ বরাদ্দ এনে, এটিকে স্টেট আর্ট ভবনে নিয়ে, ওয়ার্ল্ড ক্লাস ফ্যাকাল্টি হান্ট করে এনে নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।’
আরো পড়ুন:
ভালো বেতন দিয়ে শিক্ষকতা পেশাকে আকর্ষণীয় করতে হবে: অধ্যাপক মামুন
সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের বিষয়ে তিনি জানান, সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে আমরা কোথায় আর ভিয়েতনাম কোথায়? এই নিয়ে আসুন একটু আলোচনা করি। প্রথমেই ভিয়েতনাম নিয়ে বলবো, তারপর বাংলাদেশ নিয়ে।
বিশ্ব রাজনীতির টানাপোড়েনে বদলে যাচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি খাতের কাঠামো, আর সেই পরিবর্তনের মধ্যেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ভিয়েতনাম উঠে আসছে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের এক নতুন ও শক্তিশালী খেলোয়াড় হিসেবে।
এক সময়ের সস্তা উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এই দেশটি এখন যুক্তরাষ্ট্র-চীন চিপ যুদ্ধের কৌশলগত ‘ডিকাপলিং’ বা বিচ্ছিন্নতার অন্যতম লাভবান রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র যখন ক্রমশ চীনের ওপর প্রযুক্তিগত বিধিনিষেধ আরোপ করছে, তখন মার্কিন ও মিত্র দেশগুলোর প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো নতুন সরবরাহ কেন্দ্র খুঁজছে; যেখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দক্ষ জনশক্তি ও পশ্চিমা ঘরানার রাজনৈতিক সামঞ্জস্য থাকবে।
ভিয়েতনাম এই তিন ক্ষেত্রেই সফল, এবং সবচেয়ে বড় কথা—এটি চীন নয়।
ভিয়েতনামের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হলো এর উচ্চশিক্ষিত ও উদ্যমী মানবসম্পদ। এসটিইএম (স্টেম) খাতে টানা বিনিয়োগের ফলে দেশটি এখন দক্ষ প্রকৌশলী ও ডিজাইনার তৈরিতে অগ্রগামী।
তুলনামূলকভাবে কম মজুরি, উচ্চ মানসম্পন্ন কাজের সক্ষমতা— এই দুয়ের সমন্বয়ে দেশটি বিশ্বজুড়ে সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানিগুলোর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
হো চি মিন সিটি ও হ্যানয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানের কোম্পানিগুলো প্যাকেজিং ও ডিজাইন সেন্টার গড়ে তুলছে।
আরো পড়ুন:
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিপজ্জনক অস্ত্রে পরিণত হয়েছে
মেধার মূল্যায়নে দল-মত-ধর্ম টানা অনুচিত
এখন প্রশ্ন হলো- আমরা কোথায় অবস্থান করছি? এই ক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে বড় বাধা হলো- আমাদের শিক্ষার মান, আমাদের অপরাজনৈতিক সংস্কৃতি, আমাদের পঙ্গপাল স্বরূপ অশিক্ষিত জনতা। তারপরেও সমস্যা হলো, আমরা ভিয়েতনামের তুলনায় অনেক পিছিয়ে আছি।
১৫ বছর আগে ভিয়েতনামের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে এক হাজারের মধ্যে ছিলো না। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ছয়শ’র মধ্যেই ছিলো।
এখন ওরা পাঁচশ’র মধ্যে আছে আর আমরা আটশ’ থেকে এক হাজারের মধ্যে আছি। গত দশ-বারো বছর ধরে ভিয়েতনাম শিক্ষায় জিডিপির চার শতাংশর বেশি বরাদ্দ দিয়ে আসছে আর আমরা দুই দশমিক আঠারো থেকে কমে এখন এক দশমিক ঊনসত্তুরে এসেছি। পার্থক্যটা নিশ্চয়ই পরিষ্কার।
এখন আশার কথা হলো বাংলাদেশের অন্তত ৯ জন স্কলার আছেন, যারা আমেরিকাল টপ র্যাঙ্কিং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। এরা সবাই সেমিকন্ডাক্টর ফিল্ডে বিখ্যাত।
একই সঙ্গে বলতে হবে, এরা সবাই বুয়েট গ্রাজুয়েট। আমরা এদেরকে কাজে লাগাতে পারি।
খোঁজ নিলে আমি নিশ্চিত, আমেরিকার অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইউরোপ-কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায়ও নিশ্চয়ই অনেকে আছে। আমাদের উচিত কনসোর্টিয়াম করা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সেমিকন্ডাক্টর রিসার্চ সেন্টার আছে, যার বয়স কম করে হলেও ৩৫ বছর। অথচ এর ইমপ্যাক্ট শূন্য। দেশের সবচেয়ে প্রাচীন এবং সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিকন্ডাক্টর রিসার্চ সেন্টারের অবস্থা জানলে চোখে পানি আসবে।
এখানে না আছে নিজস্ব ফ্যাকাল্টি, না আছে পোস্ট-ডক ফেলো, না আছে পিএইচডি ছাত্র, আর না আছে উল্লেখ করার মতো গবেষণা। এটি অন্য ৬৬ গবেষণা সেন্টারের মত ইমপ্যাক্টহীন।
যেন সেন্টারগুলো করাই হয়েছে ৬৬ জনকে পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার জন্য। এই পদগুলোই হলো রাজনীতি করার ইন্সেন্টিভ।
অথচ এই সেমিকন্ডাক্টর রিসার্চ সেন্টারটি হতে পারতো সেন্টার অফ এক্সেলেন্স। এর মাধ্যমেই দেশকে সেমিকন্ডাক্টরে নেতৃত্ব দেওয়া যেতো। কিন্তু এসব নিয়ে ভাবার জন্য কেউ আছে? শত বছরের পুরনো বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন পোস্ট-ডক নাই।
অথচ ১১৫ বছরের পুরনো চীনের সিনহুয়া ইউনিভার্সিটির এখন র্যাঙ্কিং ১৬ আর আমরা আটশ’র বেশি।
সিনহুয়া ইউনিভার্সিটিতে পোস্ট-ডকের সংঘ্য দুই হাজার নয়শ’র বেশি। পার্থক্য বুঝতে পারছেন? ওখানকার ভিসি সারাদিন ব্যস্ত থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়কে কীভাবে শিক্ষা ও গবেষণায় আরো উন্নত করা যায়, সেটা নিয়ে।
আর আমাদের ভিসি ব্যস্ত থাকেন ঝগড়া মেটাতে, অনুষ্ঠান উদ্বোধনে, শিক্ষক নিয়োগ ও প্রমোশন বোর্ডের মিটিংয়ে।
শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।