শিক্ষা বাঁচাতে হলে মন্ত্রণালয়মুক্ত করা উচিত: অধ্যাপক মামুন | বিশ্ববিদ্যালয় নিউজ

শিক্ষা বাঁচাতে হলে মন্ত্রণালয়মুক্ত করা উচিত: অধ্যাপক মামুন

একটা ভালো স্কুল বা কলেজ কিংবা ইউনিভার্সিটির কি ক্ষমতা সেইটা কি আমরা একটু সময় নিয়ে কখনো ভেবেছি? এইটা ভাবার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো উদাহরণ হিসেবে আপনার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কল্পনা করুন।

#কামরুল হাসান মামুন #শিক্ষা #স্কুল

অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুনঅধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন

বাংলাদেশের শিক্ষা ও গবেষণাকে বাঁচাতে হলে মন্ত্রণালয়মুক্ত করা উচিত বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন।

মঙ্গলবার (১৩ মে) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে অধ্যাপক মামুন এ কথা বলেন।

তার পোস্টটি দৈনিক শিক্ষাডটকমের পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হলো-

একটা ভালো স্কুল বা কলেজ কিংবা ইউনিভার্সিটির কি ক্ষমতা সেইটা কি আমরা একটু সময় নিয়ে কখনো ভেবেছি? এইটা ভাবার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো উদাহরণ হিসেবে আপনার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কল্পনা করুন। তারপর ধরুন এই প্রতিষ্ঠানটি যদি না থাকতো তাহলে সেই সমাজ তথা দেশের কতটা ক্ষতি হতো তা কল্পনা করুন। আমার দৃষ্টিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে ইমপ্যাক্টফুল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো নটরডেম কলেজ। এই কলেজটি সিঙ্গেল হান্ডেডলি বাংলাদেশের শিক্ষার মানকে ধ্বংসের হাত থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা করার পেছনে বিরাট অবদান রাখছে। এইবার কল্পনা করুনতো বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে নটরডেম কলেজ আছে। আরও কল্পনা করুন সেন্ট জোসেফ ও হলিক্রসের স্কুল কলেজ বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলায় আছে। ভাবতে পারছেন কি সুন্দর বাংলাদেশই না হতো।

আরো পড়ুন

শিক্ষকরাই এই দেশে সবচেয়ে নিপীড়িত

শিক্ষকদের উন্নত সুবিধা না দিলে সুন্দর মানুষ তৈরি হবে না

বাংলাদেশের মতো বেতন বৈষম্যের দেশ খুব কম আছে

সম্পদের ‘অপ্রতুলতায়’ শিক্ষকদের প্রাপ্য সম্মানী দেওয়া যাচ্ছে না

নটরডেম কলেজ কিভাবে তার মান এত বছর যাবৎ ধরে রাখতে পারছে? পারছে কারণ এর উপর মন্ত্রণালয়, সরকার, চেয়ারম্যান, এমপিদের খবরদারির সুযোগ নাই। এটি একটি ক্রিস্টিয়ান মিশনারি কলেজ। এইরকম মিশনারি স্কুল বা কলেজ আরও আছে যেমন সেন্ট গ্রেগরী, ইয়ং ওমেন খ্রীষ্টান এসোসিয়েশন বা YWCA স্কুল, সেন্ট গ্রেগরী স্কুল, হলিক্রস স্কুল এন্ড কলেজ ইত্যাদি মিশনারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।

আমাদের মন্ত্রণালয় বা সরকারি ব্যবস্থা কতটা খারাপ তা বুঝতে শুধু ভাবুন আগামীকাল এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরকারের হাতে ছেড়ে দিয়ে মিশনারিগুলো বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেছে। আমি লিখে দিতে পারি এই সবগুলো প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের অন্য সাধারণ স্কুল বা কলেজে পরিণত হবে যেখানে মানাজেমেন্টের নাম এলাকার প্রভাবশালীরা ঢুকবে। ঢুকে শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে সকল খারাপ কাজের যাত্রা শুরু হবে আর এইসব কাজের সহযোগী হবে আমাদের আমলা, এমপি মন্ত্রীরা। বাংলাদেশের যেকোন ভালো জিনিসকে যদি ধ্বংস করতে চান সেটিকে মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিয়ে আসুন তারপর শুধু চেয়ে চেয়ে দেখুন কত দ্রুত সেগুলো নষ্ট হয়।

বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি কমিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে। Bangladesh Council of Scientific and Industrial Research (BCSIR) ও মন্ত্রণালয়ের অধীনে। দিন যত যাচ্ছে এই দুটি প্রতিষ্ঠান ততই গুণেমানে নিমিজ্জিত হতে হতে তলিয়ে যাচ্ছে। শুধু যদি পরমাণু শক্তি কমিশনের কথাই বলি আমি ভাবতে পারিনা কিভাবে মন্ত্রণালয়ের মাস্টার্স পাশ আমলারা বিজ্ঞানীদের অপমান, অপদস্ত করে পৈশাচিক আনন্দ পায়। একজন ফুল ব্রাইট স্কলারশিপ পেয়েছে তাকে ছুটি দেয়নি। এই না দিতে পাড়ার মধ্যে নিশ্চই পৈশাচিক আনন্দ আছে। অথচ ভিয়েনায় বৈজ্ঞানিক কনফারেন্সে বিজ্ঞানী না পাঠিয়ে মন্ত্রণালয়ের আমলারা ঠিকই যাচ্ছে। লজ্জা লাগে না? না লাগে না কারণ আমাদের আমলারা প্রচন্ড বিদেশ ভ্রমণ প্রীতি আছে। এর কারণ হলো এতে বিদেশ ভ্রমণও হলো আবার টাকা আয় এবং পরিবারের জন্য শপিংও হলো। এত ছোট মনের স্বার্থপর আমলা পৃথিবীতে আছে বলে মনে হয়না। বিদেশ ভ্রমণ প্রীতির পাশাপাশি এদের দামি গাড়িতে চড়ার প্রীতিও মারাত্মক লেভেলের। কোন একটা প্রজেক্ট মানেই হলো বিদেশ ভ্রমণ আর প্রাদো কিংবা পাজেরো গাড়ি কেনার ব্যবস্থা থাকবেই।

আরো পড়ুন

মেধার মূল্যায়নে দল-মত-ধর্ম টানা অনুচিত

শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে

ভালো বেতন দিয়ে শিক্ষকতা পেশাকে আকর্ষণীয় করতে হবে

বাংলাদেশের শিক্ষা ও গবেষণাকে বাঁচাতে হলে শিক্ষাকে এই মন্ত্রণালয়ের খবরধারী থেকে বাঁচাতে হবে। তাহলে আশু করণীয় কি? ইউজিসিকে মন্ত্রণালয়মুক্ত করে এটিকে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান বানানো জরুরি। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) কেও মন্ত্রণালয়মুক্ত করে এটিকে একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান বানানো জরুরি। এনসিটিবি যতদিন মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকবে মাফিয়াইজম চলবেই এবং বই লেখা ও ছাপানো নিয়ে বিতর্ক চলতেই থাকবে। বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন ও BCSIRকে বাঁচাতে হলে এই দুটিকেও অতিশীঘ্র মন্ত্রণালয়মুক্ত করা উচিত। যারা গবেষক, যাদের পিএইচডি ও পোস্ট-ডক থাকবে, যারা জ্ঞান সৃষ্টি করবে তাদেরকে কি করে মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাখে আমি বুঝি না।

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিয়োগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

#কামরুল হাসান মামুন #শিক্ষা #স্কুল